কমছে কেন শিশুতোষ চলচ্চিত্র অনুষ্ঠান?
আজকাল | 3 | ২০১৯-১২-১৭ ০৮:৩৯:০০ বাড়ি থেকে পালিয়ে, গুপী গাইন বাঘা বাইন, ছুটির ঘণ্টা, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী কিংবা সোনার কেল্লা—শৈশবের রঙিন দিনগুলো এসব চলচ্চিত্রে ভেসে ওঠে। আরও আছে হোম অ্যালোন, ইটি দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল-এর মতো ছবি। শিশুমন, কল্পনা ও চারপাশের জগৎ নিয়ে তৈরি এসব ছবি।
শিশুদের সুস্থ বিনোদনের কথা মাথায় রেখে হ্যারি পটার সিরিজের মতো চলচ্চিত্র বা অ্যানিমেটেড ছবি হচ্ছে হলিউডে। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্রটি বেশ হতাশাজনক।
স্বাধীনতার পর থেকে এখানে শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র হয়েছে হাতে গোনা। বর্তমানে বছরে অনুদানের একটি ছাড়া শিশুদের জন্য আর ছবি তৈরি হয় না।
শিশুদের বিনোদন, মানসিক গঠন ও শিক্ষাবিস্তারে পৃথিবীজুড়েই চলচ্চিত্রের সুখ্যাতি রয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের 'সাবালক ভাষা' খুঁজতে গিয়ে দিনকে দিন কমে যাচ্ছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান তাই বলছে।
হাতে গোনা দু'একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হলেও, ঠিক-ঠাক প্রচারণার অভাবে সেসবও থাকছে শিশুদের নাগালের বাইরেই। বিশ্বের সব দেশে যেখানে শিশুতোশ চলচ্চিত্র নির্মাণ বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাম পাচ্ছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।
এরপরও চলতি বছর নির্মাতা ফয়সাল রদ্দি ও মানিকের 'পাঠশালা', মৃত্তিকা গুণের 'কালো মেঘের ভেলা' ও জাঁ-নেসার ওসমানের 'পঞ্চসঙ্গি' বিভিন্ন উৎসব ও টিভিতে প্রচারিত হওয়ার পর বেশ আলোচনায় এসছে। কালো মেঘের ভেলা ও পঞ্চসঙ্গী দুটি চলচ্চিত্রই সরকারি অনুদানে নির্মিত। সংখ্যার হিসাবে কম হলেও এসব চলচ্চিত্রের মান নিয়ে আপত্তি নেই কারও।
'পাঠশালা'তে এক মেধাবী পথশিশুর জীবন জয়ের অদম্য গল্প দেখানো হয়েছে। দশ বছরের শিশু মানিক, জীবনের কঠিন বাস্তবতায় শৈশবেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। জীবিকার তাগিদে চলে আসে ঢাকা। কাজ নেয় একটা গাড়ির ওয়ার্কশপে। সেখানে সারাদিন খুঁটিনাটি কাজ, অমানুষিক পরিশ্রম, তবু স্কুলে পড়ার স্বপ্ন ছাড়ে না মানিক।
তার এই স্বপ্নপূরণের লড়াইয়ে এক সময় এগিয়ে আসে আট বছরের আরেক শিশু চুমকি। বাংলাদেশে অকালে স্কুল থেকে ঝরে পড়া মানিকের সংখ্যা কম নয়। দেশে এ জাতীয় সব মানিকের শিক্ষাজীবনের নিশ্চয়তার বার্তা নিয়েই চলচ্চিত্র 'পাঠশালা'। ছবিটির মূল স্স্নোগান, 'সব মানিকের জন্য স্কুল চাই'। আর 'কালো মেঘের ভেলা'-তে দেখানো হয়েছে নয় বছর বয়সী দুখুর গল্প। যার কাজ ট্রেনের যাত্রীদের মালামাল বহন করা।
প্রচারিত হওয়ার পর ছবি দুটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অথচ পূর্ব ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, দেশে শিশুতোষ চলচ্চিত্রের দর্শকের কমতি নেই। ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দীপু নাম্বার টু, ২০০০ সালের শরৎ '৭১, ২০০৪ সালের দূরত্ব, ২০১০ সালের পুতুলের বিয়ে, ২০১১ সালের আমার বন্ধু রাশেদ ও ২০১৭ সালের 'আখি ও তার বন্ধুরা'র মতো চলচ্চিত্র এর বড় উদাহরণ।
এসব সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে সফলতার পাশাপাশি সমাজে সামগ্রিকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। এরপরও নানাবিধ কারণে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে নিরুৎসাহী অনেকে। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক উপলব্ধি, বোধ ও বিশ্বাসের বিকাশ করতে এর চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম আর হয় না।
এদিকে শিশুতোষ চলচ্চিত্রে দর্শক থাকার পরেও নির্মাণে অনীহার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবছর যেখানে বড়দের সিনেমা গড়ে অর্ধশত মুক্তি পায়, সেখানে শিশুতোষ চলচ্চিত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় চার থেকে পাঁচটি। ফলে দেশের বিরাট সংখ্যক শিশু বিদেশি সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম হলিউডের 'কুংফু পান্ডা', 'ট্রলস', 'জংগল বুক', 'বিউটি অ্যান্ড দ্যা বিস্ট', 'সিনডেরেলা', 'পিটারস ড্রাগন', 'হ্যারি পর্টার' বা 'বস বেবি'র মতো সিনেমা নিয়ে মেতে উঠছে।
সঙ্গে শিশুদের মননে প্রবেশ করছে বিদেশি সংস্কৃতি। এর লাগাম এখনই টানা উচিত বলে মানছেন কেউ কেউ।