গণহত্যায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীকে বিচারের ভার দেওয়া যায় না: গাম্বিয়া
আজকাল | 1 | ২০১৯-১২-১৩ ১১:৪৯:০০ জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক আদালত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে। মামলার শুনানির তৃতীয় ও শেষ দিনে গাম্বিয়ার পক্ষে মার্কিন আইনজীবী পল রাইখলার ট্রাইব্যুনালকে বলেছেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের তদন্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং-সহ শীর্ষ ছয় সেনা কর্মকর্তা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। তাদের ফৌজদারি অপরাধের দায়ে বিচারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তাই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে বিচারের ভার তুলে দেওয়া যায় না।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া।
মামলায় নিজ দেশের আইনি লড়াইয়ে নেমে শুনানির প্রথম দিন বুধবার সু চি দাবি করেন, মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক আদালতে অপরাধী সেনাসদস্যদের বিচার হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় সেনা সদস্যদের সাজা পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের দ্রুত বিচার চলছে দাবি করে সু চি বলেন, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হলে দোষী সেনা সদস্যদের বিচার প্রক্রিয়া থমকে যাবে। আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ার চেয়ে যেকোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিচার প্রক্রিয়া সব সময় দ্রুত সম্পন্ন হয়।
সু চি’র যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার গাম্বিয়ার পক্ষের মার্কিন আইনজীবী পল রাইখলার বলেছেন, ২০১৭ সালের অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চরম সহিংসতা এবং এর ফলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার বিতাড়িত হওয়ার অভিযোগ মিয়ানমার নিজেও অস্বীকার করেনি। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার অভিযুক্ত সেনাদের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
১৭ বিচারকের প্যানেলকে রাইখলার বলেন, ‘যখন কীনা জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লাংসহ শীর্ষ ছয় সেনাকর্মকর্তাকে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং ফৌজদারি আইনে তাদের বিচারের সুপারিশ করেছে; তখন কী করে আমরা আশা করতে পারি যে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে তারা নিজেরাই তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে?’
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগে কয়েকজন সেনা সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল শুরুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। ২৬ নভেম্বর নিজস্ব আদালতে এই কথিত বিচার শুরু করেছে তারা। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে এই বিচার শুরু করে দেশটি। এর আগে মিয়ানমারের ইন ডিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার দায়ে ৭ সেনা সদস্যকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও এক বছরেরও কম সময় কারাভোগের পর গত নভেম্বরে তারা মুক্তি পায়।
বৃহস্পতিবার গণহত্যা মামলার শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা বন্ধে তাদের পদক্ষেপের বিষয়টির ব্যাপারে কোনভাবেই মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে মামলার পূর্ণ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সংযত রাখতে ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।